Publish: Wednesday, 29 October, 2025, 7:43 AM

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশের পর এই হামলা চালালো ইসরায়েল। যিনি দাবি করেছেন, হামাস মার্কিন মধ্যস্থতায় আয়োজিত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গাজা শহরের সাবরা এলাকায় চার জন এবং খান ইউনিসে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া সমগ্র অঞ্চলে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় যুদ্ধবিরতি বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরামর্শের পর’ প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে তৎক্ষণাৎ শক্তিশালী হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’
গাজা শহর থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, আল-শিফা হাসপাতালের পেছনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তিনি বলেন, ‘গাজার আকাশে ড্রোনসহ ব্যাপক সামরিক কার্যক্রম দেখা গেছে। স্থানীয়রা হামলাকে ‘ভয়ঙ্কর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হাসপাতালের রোগী ও কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলার পরও যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল আছে। তিনি বলেন, ‘ছোটখাটো সংঘাত হতে পারে, তবে প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় চুক্তি বজায় থাকবে।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ দাবি করেছেন, হামাস তাদের সেনাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং মরদেহ ফেরতের চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ‘কঠিন মূল্য’ দিতে হবে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সুলাইহ আল-হিন্দি বলেছেন, তারা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বন্দিদের মরদেহ উদ্ধার করা তাদের জন্য ‘কঠিন’ হয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং বাকি মৃতদেহ ফেরতের দায় ইসরায়েলের।
হামাস আরও জানিয়েছে, রাফাহে যে গুলি-হামলা হয়েছে, তার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা ইসরায়েলের হামলাকে ‘যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন’ হিসেবে দেখেছে।
রাফাহ সীমান্তে গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ইসরায়েলি সেনা ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ। পরে আর্টিলারি শেলিং শুরু হয়, এবং খান ইউনিস শহরের পূর্ব অংশে বিস্ফোরণ শোনা গেছে। এক ইসরায়েলি সৈনিক আহত হয়েছেন।
হামাস ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি কিছু আরব ও মুসলিম দেশ ইসরায়েলকে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
হামাসের সামরিক শাখা ঘোষণা করেছে, ইসরায়েলের বন্দির মৃতদেহ ফেরত দেওয়া এখন স্থগিত থাকবে। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলের যেকোনো উত্তেজনা মৃতদেহ উদ্ধার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে। মঙ্গলবার আরও দুইজন নিহত ইসরায়েলি বন্দির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, নেতানিয়াহু শুরু থেকেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করছেন। ইউরোপীয় কনসিল অন ফরেন রিলেশনসের বিশ্লেষক মুহাম্মদ শেহাদা বলেন, ‘নেতানিয়াহু সীমা পরীক্ষা করছেন। তারা রাফাহ সীমান্ত খোলেনি, সাহায্য সীমিত রেখেছে এবং বিভিন্ন হামলা চালাচ্ছে।’
ইসরায়েলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ মনে করেন, এই বিবাদ পুরো যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ভাঙবে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং অঞ্চলীয় অংশীদাররা চুক্তিতে এতটাই বিনিয়োগ করেছে যে, তা সহজে বাতিল হবে না।
দোহা থেকে আল জাজিরার নিদা ইব্রাহিম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা গাজায় যুদ্ধ চালানোর অনুমতি দেবে না। ইসরায়েল সংঘাত সৃষ্টি করছে যাতে তারা হামলা চালাতে এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ