Publish: Sunday, 13 July, 2025, 10:49 PM

ফেনীতে চলমান বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের ৭ জুলাই শুরু হওয়া ভারি বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চাপে বন্যা রক্ষা বাঁধের ২১টি স্থানে ভাঙনে ফেনীতে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়। ১০ জুলাই থেকে বৃষ্টিপাত কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। বন্যার পানি নেমে আসার পর রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন খামারে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তর বন্যার প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। ওই প্রতিবেদনে শুধু পুকুর ভেসে গিয়ে মাছের খামারিদের ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রতিবেদনে মুরগি, গরু, ছাগল ও মহিষের মৃত্যুতে ৬৪ লাখ টাকার সম্পদহানি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কৃষি বিভাগের প্রতিবেদনে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিভাগ, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। পানি গড়িয়ে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীণ অনেক সড়ক থেকে পানি নামার পর বড় বড় গর্ত থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। অনেকেই বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে সহায়তার অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
এদিকে গতকাল ফেনীতে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এ সময় তিনি বলেন, ‘ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হবে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটি সেনাবাহিনীকে দিয়ে বাস্তবায়ন করার কথা ভাবছে সরকার। বাঁধের কাজ এক নম্বর হতে হবে।
জানা যায়, গত ৭ জুলাই সোমবার বিকাল থেকে ফেনীতে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে ফেনীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর মাঝে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চাপে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার রাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে থাকে।
সর্বশেষ ফুলগাজী ও পরশুরাম এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙ্গে চার উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসব এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, আসবাবপত্র, গবাদিপশুসহ সবকিছু বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক কাপড়ে মানুষ জেলার অর্ধশতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ওঠে।
১০ জুলাই থেকে বৃষ্টিপাত কমতে থাকলে ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হয়। তবে লোকালয়ে ঢুকে পড়া বন্যার পানিতে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন তলিয়ে যায়।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা এখনো শেষ হয়নি। কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির একটি বিবরণী আমাদের দিয়েছে। এটিকে আমরা চূড়ান্ত ভাবছি না। এখনো জেলার অনেক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য হাতে পাব। দুর্গত এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ