দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, কাতারকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু কাতার এ দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল ইসরায়েল হামাস নেতাদের লক্ষ্য করছে, যারা “দুর্ভাগ্যজনকভাবে” দোহায় অবস্থান করছিল। তিনি আরও বলেন, “একটি সার্বভৌম দেশে একতরফা বোমাবর্ষণ যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের লক্ষ্য পূরণ করে না। তবে হামাসকে দুর্বল করা একটি সঠিক পদক্ষেপ।” খবর আল জাজিরার।
লেভিট দাবি করেন, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ কাতারকে হামলার আগেই অবহিত করেছিলেন।
কিন্তু কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের সরকারকে আগে থেকে অবহিত করা হয়েছে— এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।” তিনি জানান, মার্কিন ফোন কলটি আসে হামলার শব্দ শোনা যাওয়ার সময়ই।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি জানান, ফোনকল আসে হামলার দশ মিনিট পর এবং একে তিনি “রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ” আখ্যা দেন।
হামলায় কাতারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হামাস বলেছে, তাদের পাঁচ সদস্য নিহত হলেও প্রধান আলোচক দল বেঁচে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরে বলেন, তিনি “হামলার অবস্থান নিয়ে খুবই দুঃখিত” এবং কাতারকে আশ্বস্ত করেছেন এটি আর হবে না। তিনি লেখেন, এটি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত ছিল, তার নয়।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ফোনে বলেন, এই হামলা “বেপরোয়া অপরাধমূলক হামলা”, যা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি যোগ করেন, “কাতার তার নিরাপত্তা রক্ষায় সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”
হামাস অভিযোগ করেছে, তাদের আলোচক দল তখন ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের সঙ্গে “যৌথভাবে দায়ী” করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দোহায় আল-উদেইদ বিমানঘাঁটির কাছে এমন হামলা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতায় বড় আঘাত হেনেছে। আরব সেন্টার ওয়াশিংটনের নির্বাহী পরিচালক খালিল জাহশান মন্তব্য করেছেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশই এমন হামলার শিকার হয়, তবে আঞ্চলিক অন্য মিত্ররাও নিরাপদ নয়।”
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা কাতার আপাতত তার মধ্যস্থতার ভূমিকা চালিয়ে যাবে বলে জানালেও আঞ্চলিক ভারসাম্য এখন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ