চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় নিরাপত্তা দপ্তরের জিম্মা থেকে লুট হওয়া রামদা উদ্ধারে ধীরগতির অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। লুট হওয়া ১৩০টি রামদার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ১৬টি। সংঘর্ষের ঘটনায় হওয়া মামলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আসামি করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, রামদা উদ্ধারে প্রয়োজনে অভিযান চালানো হবে। আর মামলায় নিরাপরাধ কাউকে আসামি করা হয়নি বলে দাবি তাদের।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হলগুলো থেকে ১৬০টি রামদা জব্দ করে প্রশাসন। দেশি এই অস্ত্রগুলো নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ব্যবহার করত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ। এগুলো এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু গত রোববার স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় দপ্তরের অস্ত্রাগার থেকে অধিকাংশ রামদা লুট হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজমূল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন হল থেকে প্রায় ১৬০টি রামদা জব্দ করে নিরাপত্তা দপ্তরে সংরক্ষণ করেছিল। এই অস্ত্রাগার লুট করার জন্য ৬টি তালা ভাঙা হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা কর্মীদের মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য (এডমিন) স্যারও অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন এটা না করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারিনি। প্রায় ১৩০টি রামদা লুট হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সব ছাত্র সংগঠনের সহযোগিতা চাই। কারণ এই অস্ত্র লুট একসময় শিক্ষার্থীদের জন্যই বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।’
এসব রামদা খোয়া যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ধারণা তা সামনের দিনে যেকোনো ধরনের সংঘাতে ব্যবহার করতে পারে কোনো পক্ষ। শিক্ষার্থীদের দাবি, আত্মরক্ষার তাগিদে সংঘর্ষের দিন অনেকেই এসব অস্ত্র নিয়ে থাকতে পারে। তবে এদের মধ্যে অনেকেই মুখোশধারী ছিলেন। আর এটিই শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, মুখোশধারীদের পরিচয় তারা জানেন না। স্থানীয়রাও এসব অস্ত্র নিতে পারে বলে ধারণা তাদের। প্রশাসন এসব কেন সংরক্ষণ করে রেখেছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তাদের।
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় হওয়া মামলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, মামলার স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের আসামি করা হলেও, ঘটনার সাথে যুক্ত দারোয়ানের নাম আসামির তালিকায় নেই।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিও ও ছবিতে স্থানীয়দের অনেককেই হামলায় সক্রিয় দেখা গেছে। এরা পরিচিত মুখ হলেও আসামি করা হয়নি। তাদের দাবি, মামলার বাদীর বাড়ি জোবরা গ্রামে হওয়ায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব হতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ড. সাইফুল ইসলাম অবশ্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে। কাউকেই দলীয় পরিচয়ের জন্য আসামি করা হয়নি। যারা শিক্ষার্থীদের হামলা করেছে তারাই এ মামলার আসামি। মামলায় প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আসামি হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। নিরাপরাধ কেউ যদি মামলায় হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করেই মামলা দায়ের করেছে প্রশাসন।’
এদিকে, খোয়া যাওয়া রামদা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জমা দিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তাতে খুব একটা সাড়া মেলেনি। সব মিলিয়ে মাত্র ১৬টি রামদা জমা দিয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী।
গত সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায় একটি বাসায় প্রবেশকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে দারোয়ানের মারধরের ঘটনায় গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শিক্ষকসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ ঘটনায় ১ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছে প্রশাসন।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ