রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের তারাপুরে পাঁচ মুক্তিযোদ্ধার কবরস্থানে বাঁশের সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরাও করা অংশে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে দুর্বৃত্তরা কবরস্থানটির সীমানা প্রাচীর ও বাঁশ দিয়ে ঘেরা অংশে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোরে ফজরের ওয়াক্তে মসজিদে মুসুল্লিরা নামাজ পড়তে এলে কবরস্থানে আগুন দেখতে পান। পরে মসজিদের মাইকে আগুন লাগার ঘটনা জানালে লোকজন দ্রুত এসে আগুন নেভান। সেখানে পেট্রোল ও কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী এটিকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের পরিকল্পিত নাশকতা হিসেবে দেখছেন।
তাদের অভিযোগ, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মানে না, স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, তারাই এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ করতে পারে। দেশের জন্য জীবন দিলাম, আজ স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরও নিরাপদ নয়?
জানা গেছে, ১৯৪৬ সালে তারাপুর কবরস্থানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিন একরের বেশি জায়গার ওপর অবস্থিত এ কবরস্থানে ২০২২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চার শতাংশ জায়গা আলাদা করে বাঁশের সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। বর্তমানে সেখানে স্থানীয় পাঁচ মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে।
তারাপুর জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও কবরস্থান দেখভালের দায়িত্বে থাকা শহিদুল ইসলাম জানান, ফজরের আজান দিতে যাওয়ার সময় তিনি আগুন দেখতে পান। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও হেফজখানার শিক্ষার্থীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তিনি আরও বলেন, এটি দুর্ঘটনা নয়। কবরস্থানে বিদ্যুৎ নেই, আশপাশেও আগুন ধরার কোনও উৎস নেই। এটি স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত নাশকতা।
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমশের আলী বলেন, একটি স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর পর্যন্ত এখন হামলার শিকার হচ্ছে। মনে হচ্ছে ৭১-এর পরাজিত শক্তিরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও সাবেক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান জাহাঙ্গীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতার পক্ষের কাউকে দিয়ে এমনটি হতে পারে না। যারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না তারাই আগুন দিয়েছে। খবর পেয়ে দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা, ইউএনও এবং থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কেরোসিনের গন্ধ এখনও রয়েছে। এ ঘটনার বিচার না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্তিত্ব ঝুঁকিতে পড়বে। বিজয়ের মাসে এমন ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ঈদগাঁ কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতি সজীব হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে তিন একরের বেশি জায়গা নিয়ে স্থাপিত কবরস্থানের প্রায় চার শতাংশ জায়গা সংরক্ষিত করে ঘিরে রাখা আছে। সেখানে পাঁচ মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়েছে। সেখানে আগুন দিয়েছে, এর থেকে ন্যক্কারজনক কাজ আর হতে পারে না। ঘটনাস্থলে এখনও কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে আমরা এখন থানায় আছি।
এ প্রসঙ্গে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাতুল হক বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে মনে হয়েছে আগুন ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো হয়েছে। এটি কোনও দুর্ঘটনা নয়। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি এবং পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি করেছে। স্থানীয়রা দ্রুত তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ