রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবারে হামলার ঘটনায় মো. রাসেল মোল্লা (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. রাসেল মোল্লা গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের জতুমিস্ত্রীপাড়ার মো. আজাদ মোল্লার ছেলে। রাসেল নুরাল পাগলের দরবারের ভক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ জন ও রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনজন।
জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল বহু বছর আগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরীফ। আশির দশকের শেষের দিকে নিজেকে ‘ইমাম মাহদী’ দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ জনরোষ এড়াতে তিনি মুচলেকা (অঙ্গীকার নামা) দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি আবার ফিরে এসে তার দরবার শরীফের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।
গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরাল পাগল। পরে ওইদিনই সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে তার ভক্তানুরাগীদের অংশগ্রহণের দরবার শরীফের ভেতরে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে রাত ১০ টার দিকে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। পবিত্র কাবা শরীফের আদলে তার কবরের রং করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ফুঁসে ওঠেন বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের আন্দোলনের ফলে কবরের রং পরিবর্তন করা হয়।
এ বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক হয় বিক্ষুব্ধ জনতা ও নুরাল পাগলের পরিবারের সদস্যদের। এরপরেও কবর নিচে নামাতে গড়িমসি করে নুরাল পাগলের পরিবারের সদস্যরা।
পরে এ বিষয়ে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। কবর নিচে নামানো না হলে কবর ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুম্মার পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলের দরবারে। পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ তুমুল সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। এক পর্যায়ে নুরাল পাগলের দরবারে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে গোয়ালন্দ পদ্মার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর নিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, চাঙচুর করা হয় পুলিশের দুটি গাড়ি। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী এলে তাদের ওপরেও চড়াও হন বিক্ষুব্ধ জনতা।
হামলায় ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। এর বাইরে এ বিষয়ে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.শরীফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আহত হয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে চারজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। ১৬ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ফরিদপুর হাসপাতালে যাওয়ার পথে একজন মারা গেছে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ