পিরিয়ড, যা মাসিক নামে পরিচিত, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নারীর বয়ঃসন্ধিকালে একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে শুরু করে প্রতি মাসে পিরিয়ড বা মাসিক হয়ে থাকে। পিরিয়ডের সময় তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে।
পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত তলপেটে খিঁচ ধরে থাকা ব্যথার মতো অনুভূত হয়। পিরিয়ড হওয়ার কিছু আগে থেকে শুরু করে পিরিয়ড চলাকালীন প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে এই ব্যথা থাকতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথার তীব্রতা এতো বেশি বেড়ে যায় যে, এর কারণে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
পিরিয়ডের সময় কিছু সাধারণ শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো সাধারণত মাসিক চক্রের অংশ এবং প্রত্যেক নারীর ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। পিরিয়ডের সময় জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে নানান জিজ্ঞাসা থাকে। যেমন, অনেকেই জানতে চান, এ সময় ব্যায়াম করা নিরাপদ কিনা কিংবা স্যানিটারি ন্যাপকিন সর্বোচ্চ কতক্ষণ ব্যবহার করা ভালো ইত্যাদি।
এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করা একদম নিরাপদ এবং উপকারি।
ব্যায়ামের উপকারিতা
পিরিয়ডের ব্যথা ও ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে।মুড ভালো রাখতে হরমোন রিলিজে সাহায্য করে (এন্ডোরফিন)।ব্লটিং বা ফোলাভাব কমায়।ঘুম ভালো হয় ও মানসিক চাপ কমায়।শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে ও শক্তি জোগায়।
যেসব ব্যায়াম করলে ভালো:
হালকা হাঁটাহাঁটি বা জগিং।যোগব্যায়াম বা ইয়োগা (বিশেষ করে স্ট্রেচিং)।হালকা স্ট্রেন্থেনিং।সাঁতার কাটা (স্যানিটারি কাপ বা ট্যাম্পন ব্যবহার করলে)।
ব্যায়াম করার সময় যা খেয়াল রাখবেন:
অতিরিক্ত ব্যথা বা ক্লান্তি অনুভব করলে বিশ্রাম নিন।বেশি ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো পিরিয়ডের প্রথম ১-২ দিনে।পর্যাপ্ত পানি পান করুন, হাইড্রেটেড থাকুন।
স্যানিটারি ন্যাপকিন সর্বোচ্চ কতক্ষণ ব্যবহার করা যায়?
সাধারণভাবে প্রতিটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পরপর পরিবর্তন করা উচিত।রক্তপাত বেশি হলে প্রতি ৩–৪ ঘণ্টায় পরিবর্তন করা উচিত।রক্তপাত কম হলে সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
পিরিয়ড চলাকালীন করণীয়:
১. পিরিয়ডের সময় রক্তপাতের জন্য স্যানিটারি প্যাড বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
২. পিরিয়ডের সময় শরীর দুর্বল লাগতে পারে, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।
৩. হালকা ব্যায়াম যেমন ইয়োগা বা হাঁটাচলা করলে পিরিয়ডের ব্যথা উপশম হতে পারে।
৪. ফল, সবজি, শস্য এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
৫. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
৭. অতিরিক্ত চিনি এবং লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া, এগুলো ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
৮. ইয়োগা বা মেডিটেশন করে মানসিক চাপ কমানো যেতে পারে।
৯. অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা পানিতে স্নান করা উচিত না।
১০. চার থেকে ছয় ঘণ্টা পরপর স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করা উচিত।
১১. অতিরিক্ত কফি বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা, এগুলো ব্যথা বাড়াতে পারে।
১২. যদি পিরিয়ড খুব বেশি ভারী হয় বা অনিয়মিত হয় অথবা অতিরিক্ত ব্যথা হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
পিরিয়ড চলাকালীন যা করবেন না:
অতিরিক্ত পরিশ্রম করা।ভারী জিনিস তোলা।ধূমপান করা।অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।পিরিয়ড চলাকালীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ এড়ানো যায়।
লেখক: ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক (গাইনি)
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ