জুলাই যোদ্ধাদের লাগাতার দুর্ব্যবহার, হুমকি ও হামলার ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীরা। এর প্রতিবাদে বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে হঠাৎ করে তারা কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। ফলে স্থবির হয়ে পড়ে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা। বর্তমানে কেবল জরুরি বিভাগ চালু থাকলেও, বহির্বিভাগ, ওটি (অপারেশন থিয়েটার) সহ সব ধরনের নিয়মিত সেবা বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা কিছু ‘জুলাই যোদ্ধা’ প্রায়ই নার্স ও কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছিলেন। কথাকাটাকাটি থেকে শুরু করে একাধিকবার হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় ২৭ মে (মঙ্গলবার) রাতে। কয়েকজন ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাহ্য পদার্থসহ হাসপাতালে পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং তাকে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রাখেন। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কর্মীরা অভিযোগ করেন, এমন একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে এভাবে হুমকি ও দমনমূলক আচরণ চালালে কেউ আর নিরাপদ থাকে না।

পরদিন সকালে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরা বিক্ষোভ শুরু করে এবং কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকেই বহির্বিভাগে সেবা বন্ধ থাকে। রোগীরা এসে অপেক্ষা করলেও চিকিৎসক কিংবা নার্সদের কাউকে পাওয়া যায়নি। নির্ধারিত বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচারও স্থগিত করা হয়, ফলে রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, “গতকাল কিছু ‘জুলাই যোদ্ধা’ আমার কক্ষে প্রবেশ করে নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। তাদের একজন দাহ্য পদার্থ সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। তারা আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন, তবে কেউ চাচ্ছিল কি না আসলে হাসপাতাল জ্বালিয়ে দিতে — তা নিশ্চিত বলা যায় না। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।”

তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনায় আমাদের চিকিৎসক ও স্টাফরা চরম আতঙ্কে আছেন। তারা মনে করছেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষে স্বাভাবিক কাজ করা সম্ভব নয়।”

কর্মীদের ভাষ্য, বিষয়টি শুধু হাসপাতালের জন্য নয়, বরং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্যও এক ধরনের হুমকি। তারা দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় এনে স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা আসেনি।

ডার্ক টু হোপ/এসএইচ