Publish: Tuesday, 25 November, 2025, 7:50 AM

প্রায় ১০ হাজার বছর পর জেগে উঠে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে ইথিওপিয়ার হাইলি গুবি আগ্নেয়গিরি। এর ফলে তৈরি হওয়া বিরাট ছাই-মেঘ দ্রুত পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দিয়েছে, এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে পারে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার (২৩ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে এই বিস্ফোরণ শুরু হয়। ফ্রান্সের টুলুজ ভলকানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার (ভিএএসি) জানায়, আগ্নেয়গিরিটির অগ্ন্যুৎপাত আপাতত থেমে গেছে, তবে এর বিশাল ছাই-মেঘ উত্তর ভারতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থাগুলো।
এদিকে, আগাম ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের বিভিন্ন এয়ারলাইন ও বিমানবন্দরে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ছাই-মেঘের কারণে সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আকাসা এয়ার, ইন্ডিগো ও কেএলএম ফ্লাইট বাতিলের তালিকায় রয়েছে।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) জানিয়েছে, বিমানগুলোকে আগ্নেয়গিরির ছাই আচ্ছাদিত অঞ্চল এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইট পরিকল্পনা, রুটিং ও জ্বালানি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।
এয়ারলাইনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনো বিমান ছাই-মেঘে প্রবেশ করেছে সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করতে হবে। এর মধ্যে ইঞ্জিনের সমস্যা, কেবিনে ধোঁয়া বা কোনো অস্বাভাবিক গন্ধের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ছাই-মেঘ কোনো বিমানবন্দর এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে অবিলম্বে রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে ও বিমান পার্ক করা এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আকাসা এয়ার জানিয়েছে, ইথিওপিয়ার হাইলি গুবি আগ্নেয়গিরির ছাই-মেঘের কারণে ২৪ ও ২৫ নভেম্বর তাদের জেদ্দা, কুয়েত ও আবুধাবিগামী ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ইন্ডিগো এক্সে পোস্ট করে জানিয়েছে, ‘ইথিওপিয়ার হাইলি গুবি আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর ছাই-মেঘ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের দিকে আসছে। যাত্রীদের উদ্বেগ স্বাভাবিক, তবে তাঁদের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’
স্পাইসজেট বলেছে, ইথিওপিয়ার অগ্ন্যুৎপাতের কারণে আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় ছাই দেখা গেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথে ফ্লাইট পরিচালনায় প্রভাব ফেলতে পারে। দুবাইগামী যাত্রীদের নিয়মিত ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করতে বলা হয়েছে।
হাইলি গুবি আগ্নেয়গিরিটি ইথিওপিয়ার এরতা আলি পর্বতমালায় অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এটি শেষবার বিস্ফোরিত হয়েছিল ১০ থেকে ১২ হাজার বছর আগে। সর্বশেষ এবারের বিস্ফোরণে সৃষ্ট ছাই-মেঘ লোহিত সাগর পেরিয়ে প্রথমে ইয়েমেন ও ওমানের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, পরে তা পূর্ব দিকে ঘুরে এসে উত্তর আরব সাগরের ওপর দিয়ে ভারতের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
সৌদি গণমাধ্যম আল-অ্যারাবিয়া জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পর আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় আগ্নেয়গিরির ছাই দেখা গেছে, যেখান দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করে। তবে এখন পর্যন্ত ভারতের দিকে আসা ছাই-মেঘকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে আলাদা কোনো সতর্কতা জারি হয়নি।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ