Publish: Sunday, 16 November, 2025, 11:18 AM

জীবনকে সুস্থ রাখার জন্য চাই সুস্থ ফুসফুস এবং বিশুদ্ধ বাতাস। ফুসফুসের যত্নের শুরু মাতৃজঠরে থাকার সময় থেকেই। গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টি, সংক্রামক রোগ, সময়ের আগে অপরিণত অবস্থায় স্বল্প ওজনের শিশুর জন্ম– এসবই শিশুর ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমায়। তাই হবু মা এবং নতুন মায়ের যত্ন শিশুর সুস্থ ফুসফুসের পূর্বশর্ত। ধূমপায়ী বাবা তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য, এমনকি ভূমিষ্ঠ না হওয়া শিশুর জন্যও হুমকিস্বরূপ। ধূমপায়ী মায়েদের জন্য এ কথা আরও বেশি সত্য।
সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষা
ফুসফুস বিভিন্ন সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার একটি প্রধান অঙ্গ। করোনাভাইরাস মহামারি এ সত্য আরও ভালোভাবে বুঝিয়েছে। নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনকি বিভিন্ন ছত্রাকজনিত রোগেরও শিকার এই ফুসফুস। অথচ সামান্য স্বাস্থ্যবিধি (যেমন– নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার) মেনে চললে এ রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বায়ুদূষণ ও পেশাগত ঝুঁকি
পরিবেশদূষণ: বর্তমান সময়ে পরিবেশদূষণ ও বায়ুদূষণ একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা, যার সরাসরি আঘাত হয় ফুসফুসে। অ্যাজমা, সিওপিডিসহ বিভিন্ন ফুসফুসের শ্বাসনালির বাধাজনিত রোগের সৃষ্টি এ বায়ুদূষণের জন্য। পৃথিবীর সজীব নির্মল বায়ু নিশ্চিতকরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ফুসফুসের যত্নের একটি অংশ।
পেশাগত ঝুঁকি: জীবিকার প্রয়োজনে কিছু পেশা (যেমন– পাথরভাঙা, জাহাজভাঙা, ওয়েল্ডিং, আঁশ ও তুষজাতীয় উপাদানের সংস্পর্শে থাকা) ফুসফুসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কাজের কারণে তৈরি ছোট ছোট ধূলিকণা বা সূক্ষ্মতন্তু ফুসফুসে আটকে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে। কাজের সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করলে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব, যে ব্যাপারে আমরা মোটেও সচেতন নই। তাই ‘অকুপেশনাল হেলথ’ বা জীবিকা-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপে সম্মিলিতভাবে সবাই উপকৃত হতে পারে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ফুসফুসের তথা সঠিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আরও মনোযোগী হতে হবে। শুধু চিকিৎসা নয়, রোগ প্রতিরোধে উদ্যোগী হওয়ার এখনই সময়।
লেখক : রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ