Publish: Saturday, 25 October, 2025, 11:23 PM

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে সংঘর্ষ, খুনের ঘটনার পর চলছে আগুনে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ভাঙচুর-লুটপাট। শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, অন্তত ৪০ থেকে ৪৫টি ঘরবাড়িতে হামলা হয়েছে।
গ্রামের মৃত আবদুল হাসিম মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ বেগম (১০০ ঊর্ধ্ব) মারা গেলে মায়ের দাফন-কাফন নিয়ে বিরোধে জড়ায় তাঁর ৬ ছেলে। এর জের ধরে শুক্রবার রাত থেকে গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘরবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয় তখন এক দফা। পরে শনিবার সকালে রণসাজে গ্রামের দুই গোষ্ঠীর লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ১ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়।
এ ঘটনায় আজ রাত ৯ টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ নাঈম নামে একজনকে আটক করেছে। সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষ থামার পর দুপুরের পর থেকে প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া শুরু হয়। হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।
অবশ্য দুপুর থেকে খুনের বদলা হিসেবে বাড়িঘরে হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় একপক্ষ তাদের ঘরবাড়ি থেকে ট্রাকে ও ভ্যানে করে মালামাল আত্মীয়–স্বজনের বাড়িতে সরিয়ে নেয়।
বিরামপুর গ্রামের খালপাড়ে আবদুল হাসিম মিয়ার বাড়ি। ওই বাড়িতে খণ্ডে খণ্ডে ছয় ছেলের বাস। সামনের দিকে ‘সুখের নীড়’ নামের পাকা দালান ঘর। ছোট ছেলে নূরুল হকের এ ঘরেই থাকতেন মোছাম্মৎ বেগম। শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় তিনি মারা গেলে বড় ৪ ছেলে নূরুল হককে না দেখিয়ে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করে। এ নিয়ে চার ছেলে নোয়াব মিয়া, আব্দুল হক মিয়া, ফজল হক মিয়া ও শহীদুল হকের পক্ষ নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুনুর রশিদের গোষ্ঠী এবং অন্য দুই ছেলে জহিরুল হক ও নূরুল হকের পক্ষ নিয়ে খালপাড়ের ইকবাল হোসেন, বর্তমান ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান ও ব্যবসায়ী সাচ্চু মিয়ার পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
সংঘর্ষে সাচ্চু মিয়াদের পক্ষের মো. নাসির উদ্দিন (৬৫) নিহত হন।
নুরুল হক জানান, তার মা যখন মারা যান তখন তিনি কুমিল্লায় ছিলেন। খবর পেয়ে বাড়িতে রওনা হন। বাড়ির কাছাকাছি চলে আসলেও তাকে মায়ের মরদেহ না দেখিয়ে তার ৪ ভাই মায়ের লাশ দাফন করে ফেলে। এ নিয়ে তাদের গোষ্ঠীর লোকজন ক্ষুব্ধ হয়।
নুরুল হক বলেন, ‘আমার অন্য ভাইয়েরা মাকে একবেলা খাবারও দেয়নি। ওষুধ হিসেবে একটি ট্যাবলেটও না। গত রমজানে খালপাড়ের গোষ্ঠীর সঙ্গে হারুনের গোষ্ঠীর ঝগড়া হয়। সেসময় হারুনের পক্ষে না যাওয়ায় ওই ৪ ভাই একত্রে থাকা তারা ২ ভাইয়ের ঘরে হামলা-ভাঙচুর করে। আগুন দেয়। এমনকি তারা মাকে খাট থেকে নামিয়ে ঘরে ভাঙচুর চালায়।’
শনিবার বিকেলে খালপাড়ে আদমপুর সড়ক থেকে বাড়িঘর ভাঙচুরের শব্দ পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, নূরুল হকের ৪ ভাই নোয়াব মিয়া, আব্দুল হক মিয়া, ফজল হক মিয়া ও শহীদুল হকের পাকা দালান ও টিনের ঘর ভেঙে আগুন দেওয়া হয়েছে।
একই সময়ে গ্রামের বড় বাড়ির সৈয়দ মিয়ার ৩টি ঘরে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আদমপুর সড়কের পাশে আরো একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
গ্রামের ওই দুপক্ষের মধ্যে কয়েকমাস আগে থেকে বিরোধ চলে আসছে। সেসময় লুডু খেলা নিয়ে সংঘর্ষ হলে হারুনের পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।’
ওসি আরও বলেন, ‘গোষ্ঠীগত বিরোধ নিয়ে পূর্ব থেকেই সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ ও গ্রামের ব্যবসায়ী সাচ্চুর মিয়ার পক্ষের লোকজনের বিরোধ চলে আসছে। গত শুক্রবার গ্রামের এক বৃদ্ধা মারা যান। তাঁর ছয় ছেলের মধ্যে চারজন সাবেক চেয়ারম্যান হারুন ও দুইজন সাচ্চুর পক্ষের অনুসারী। মায়ের দাফন-কাফন নিয়ে চার ভাই ও দুই ভাইয়ের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফের সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ