ইউনেস্কোর মর্যাদাপূর্ণ কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার-২০২৫ পেয়েছে বাংলাদেশি স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল। শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবন ব্যবহার ও শিক্ষার প্রসারে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান এ পুরস্কার, যা দেওয়া হয় চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শত শত মনোনয়নের মধ্যে ইউনেস্কো তিনটি উদ্যোগকে এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করেছে। সেগুলো হলো–দেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম।
চীনের শানডং প্রদেশে কনফুসিয়াসের জন্মস্থান চুফু শহরে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০তম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। ছোটবেলায় চলনবিল এলাকায় বড় রেজোয়ান দেখেছেন, বন্যা হলেই স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি উদ্ভাবন করেন এক অনন্য সমাধান।
স্থানীয় নৌকাকে রূপান্তর করেন স্কুলে, যা পরিচিতি পায় বিশ্বের সর্বপ্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে। এসব সৌরচালিত নৌকা এখনও স্কুল, লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে বর্ষাকালে পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতে শিক্ষা চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।
তার এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ইউনেস্কো বলেছে, ‘বন্যা প্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উপায়ে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই এই স্কুলের সাফল্য।’
এখন দেশের বিভিন্ন এনজিও সিধুলাইয়ের ভাসমান স্কুলের মডেল অনুসরণ করছে, পাশাপাশি এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশকে এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশ সরকারও রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০৫০-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ‘শিক্ষা শুধু পড়াশোনা নয়, এটি শান্তি, সমতা ও সহনশীলতা গড়ে তোলে। আমি আশা করি স্বাক্ষরতা ও জ্ঞানের শক্তি দিয়ে তরুণরা এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করবে, যেখানে কোনো দুর্যোগই কোনো শিশুর শিক্ষাগ্রহণ থামাতে পারবে না।’
এছাড়া ফ্রান্সের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমিগ্রেশন হিস্ট্রিতে ‘মাইগ্রেশনস অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সজিবিশন’-এ ‘বোট স্কুলস অব বাংলাদেশ–ফিউচার দ্যাট ফ্লোটস’ শিরোনামে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হয়েছে। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের তথ্যচিত্র ‘বাংলাদেশ টার্নস টাইড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ উইথ ফ্লোটিং স্কুলস’ নির্বাচিত হয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর ফাইনালিস্ট হিসেবে।
রেজোয়ানের কাজ স্থান পেয়েছে জুলিয়া ওয়াটসনের বই ‘লো–টেক: ওয়াটার’-এ, যেখানে বিশ্বের ২২টি আধুনিক ঐতিহ্যভিত্তিক উদ্ভাবন তুলে ধরা হয়েছে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ