Publish: Tuesday, 23 September, 2025, 7:59 PM

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে পদ্মার চরাঞ্চল উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি ভাঙনের শিকার হয়ে নদীতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, চার মাস আগে ওই এলাকায় মৃদু ভাঙন দেখা দিলে বিষয়টি দপ্তরগুলোকে জানানো হয়। তবে বিদ্যালয়টি রক্ষায় কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি তারা। ফলে বিদ্যালয়ের মাঠসহ পুরো ভবনটি নদীতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল কাঁচিকাটার চর বানিয়াল এলাকায় চার শতাধিক পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। স্থানীয়রা প্রধানত নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন। তবে এই অঞ্চলে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে ২০১৭ সালে ২৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য তখনকার সময়ে নির্মাণ করা হয় একতলা একটি পাকা ভবন। এর কক্ষ ছিল চারটি। কয়েক বছরের মধ্যে গড়ে ওঠা বিদ্যালয়টি হয়ে ওঠে ওই অঞ্চলের শিশু শিক্ষার এক বাতিঘর। তবে চার মাস আগে থেকেই ওই এলাকায় দেখা দেয় মৃদু ভাঙন। সবশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়ে বিদ্যালয়ের একমাত্র পাকা ভবনটি নদীতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এতে বন্ধ হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থী আজিজুল বলে, ‘বিদ্যালয়টি নদীতে চলে যাওয়ায় আমাদের পড়াশোনা বন্ধ আছে। আমাদের অনেক বন্ধু অন্য এলাকায় চলে গেছে। আমরা চাই আমাদের পড়ালেখার জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হোক।’
আয়েশা বেগম নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়েটি ক্লাস টু-এ পড়তো। স্কুলটি নদীতে চলে যাওয়ার পর মেয়েকে আর স্কুলে পাঠাই না। আমরাও ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল্লা মুন্সি বলেন, ‘এই এলাকায় একটিমাত্র বিদ্যালয় ছিল। এই বিদ্যালয়ে চরের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতো। বর্তমানে নদীভাঙনের শিকার হয়ে বিদ্যালয়টি নদীতে তলিয়ে গেছে। আমরা চাই, এই এলাকায় ভাঙন রোধে শক্ত ও টেকসই একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।’
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আল-মামুন বলেন, ‘চার মাস আগে যখন বিদ্যালয় এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়, তখন আমি বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারপরও ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিদ্যালয় মাঠ ও ভবনটি নদীতে তলিয়ে গেছে। আমাদের শিশুদের পড়াশোনা করার মতো এখন আর জায়গা নেই। অতিদ্রুত বিদ্যালয়ের জন্য অস্থায়ী একটি ঘর নির্মাণ করা জরুরি।’
তবে অস্থায়ীভাবে বিদ্যালয়টি চালুর সুযোগ থাকলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালুর কথা জানিয়েছেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়েছে। সেই মালামালগুলো দিয়ে যদি অস্থায়ীভাবে কক্ষ নিয়ে বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করার সুযোগ থাকে, তাহলে সেটি পরিচালনা করা হবে। অন্যথায় নিকটবর্তী যেই প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সেই বিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে এবং শিক্ষকরা ক্লাস নেবেন।’
ওই এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মুহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান।
তিনি বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে সাড়ে ৯ কোটি টাকার বাজেট পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা বরাদ্দ চাহিদা পাইনি। যদি এই টাকাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাহলে আমরা টেন্ডার করে কাজ শুরু করবো।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ