রাশিয়ার আক্রমণের তিন বছর পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সরকারে বড় ধরনের রদবদল এনেছেন। এই রদবদলে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ইউলিয়া সভিরিডেঙ্কো।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ইউক্রেনের পার্লামেন্ট ৩৯ বছর বয়সী সভিরিডেঙ্কোকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি ২০২০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ডেনিস শ্মিহালের স্থলাভিষিক্ত হলেন। খবর আল জাজিরার।
এর আগে সভিরিডেঙ্কো প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। এই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার মধ্যস্থতায় এ বছর ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি হয়। যা ট্রাম্প ও জেলেনস্কির শীতল সম্পর্ককে উষ্ণ করতে সাহায্য করেছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সভিরিডেঙ্কো জানিয়েছেন, তার প্রধান লক্ষ্য হবে ইউক্রেনের নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানো। একই সঙ্গে সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।
নতুন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার এমন একটি ইউক্রেন গড়ে তুলতে চায় যা সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে। আমার মূল লক্ষ্য হলো সত্যিকারের ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করা, যা সকল ইউক্রেনীয় তাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুভব করবে। যুদ্ধের সময় দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দ্রুত এবং দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে।
বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল (৪৯) এখন নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। এই মন্ত্রণালয়টি সম্প্রতি বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগের কারণে আলোচনায় ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিয়া (৫০) তার পদে থাকছেন। তবে জেলেনস্কি বিদায়ী আইনমন্ত্রী ওলগা স্টেফানিশিনাকে (৩৯) যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছেন। যদিও এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন দরকার হবে। স্টেফানিশিনার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে খনিজ চুক্তির আলোচনাতেও তার ভূমিকা ছিল। তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভার জায়গায় আসছেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে ট্রাম্পের অপছন্দের কারণ হয়েছিলেন।
গত সপ্তাহের খবরে জানা যায়, জেলেনস্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুস্তেম উমেরোভকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু বিরোধী সংসদ সদস্য ইয়ারোস্লাভ ঝেলেজনিয়াকের মতে, ওয়াশিংটন নাকি তাকে অনুমোদন দেয়নি।
এই রদবদলে আরও কিছু পদে পরিবর্তন এসেছে। উপমন্ত্রী অলেক্সেই সোবোলেভ এবং তারাস কাচকা যথাক্রমে অর্থ, পরিবেশ ও কৃষিমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইন্টিগ্রেশনের জন্য উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই রদবদল সত্ত্বেও জেলেনস্কির মন্ত্রিসভায় নতুন মুখের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তারা ইউক্রেনের এই নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদগুলোতে নিজের ‘অনুগতদের’ বসিয়ে ক্ষমতাকে আরও এক হাতে নিয়ে আসার অভিযোগও করেছেন।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ