Publish: Wednesday, 2 July, 2025, 10:23 PM

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে এ সংক্রান্ত- পৃথক চারটি আদেশ জারি করা হয়।
অবসরে পাঠানো কর্মকর্তারা হলেন- এনবিআর সদস্য (কর গোয়েন্দা ও তদন্ত) মো. আলমগীর হোসেন, (কাস্টমস নীতি) হোসেন আহমদ, (ভ্যাট নীতি) ড. মো. আবদুর রউফ ও আয়কর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) মো. শব্বির আহমদকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তাদের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং যেহেতু সরকার জনস্বার্থে তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া প্রয়োজন বলে বিবেচনা করে, সেহেতু সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হলো।
এর আগে মঙ্গলবার (১ জুলাই) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এনবিআরের কর্মকর্তাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস তালাবদ্ধ রাখায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সই করা সেই প্রজ্ঞাপনে সরকারের ‘নির্দেশনা অমান্য করে’ কাস্টম হাউস বন্ধ রাখায় জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা দাবি করে বলেছেন, আন্দোলন করার কারণেই ‘অন্যায়ভাবে’ তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে একজন যুগ্ম কমিশনার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হিংসাত্মকভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। যাদের দেওয়া হলো, তাদের সততা লেভেলেও ক্রাইসিস নেই। তাহলে কী জন্য তাদের নিয়ে এগুলো করা হচ্ছে?
তিনি বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টা বললেন, কাজে যাও। বিজনেস কমিউনিটির মধ্যস্থতায় আমরা কাজে ফিরে এলাম। এনবিআর চেয়ারম্যান বললেন, সবাই মিলে কাজ করব। তারপরও এ রকম হলে কাজের পরিবেশটা কোথায়?’
একজন অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘স্তম্ভিত হয়ে গেছি। সরকার আমাদের ন্যায়সংগত দাবির কথা শুনল না। ছোটবেলায় শিক্ষকেরা কিছু না শুনে মার দিয়ে দিতেন। মার খেয়ে তো কিছু করার থাকত না। কারণ, শিক্ষক মেরেছেন। ফলে আমরা তো আর সরকারকে কিছু বলতে পারব না। তবে এটা সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।’
এসব বিষয়ে জানতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের মোবাইলে কল করা হলে উত্তর না দিয়ে তিনি কেটে দেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মীরা। আন্দোলনের মধ্যে ২২ অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার কথা জানায় সরকার। এরপর কাজে যোগ দিলেও রাজস্ব খাতের সংস্কারে এনবিআর কর্মকর্তাদের উপেক্ষা ও অসহযোগিতা করার অভিযোগে আন্দোলনকারীরা চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে অটল থাকেন। আন্দোলন তীব্র করতে গত শনি ও রোববার পালন করা হয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। এতে সব কর অঞ্চল, কাস্টম হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার সরকার এনবিআরের সব শ্রেণির চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যক’ সেবা ঘোষণা করে। একই দিনে এনবিআরের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। এতে কর্মকর্তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন। ওই দিন সন্ধ্যায় শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান তারা।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ