Publish: Monday, 10 November, 2025, 11:39 PM

তিন দিন ধরে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি ও দুদিন ধরে কর্মবিরতি চালিয়ে আসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর এ ঘোষণা দেন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি।
রাত ৮টার পর ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমাদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এমনটা আগে কখনও দেয়নি।
“আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করব বলে সিদ্ধান্ত নেব। শহীদ মিনারে গিয়ে নেতারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। আগামীকাল থেকেই আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।”
“প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় যেহেতু আমাদের একটি লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের নিশ্চয়ণ করেছে যে এগারোতম গ্রেড দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা পে কমিশনে দেবে এবং পে কমিশন থেকে দ্রুত প্রেরণ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এবং যতদূর সম্ভব দ্রুত সহকারী শিক্ষকদের এগারোতম গ্রেডে উন্নীত করবে বলে আমাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এটাই আমি মনে করি এ মুহূর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অনেক বড় বিজয় এবং আন্দোলনের অনেক বড় ফসল।
শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাও ছিলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক সাড়ে ৮টায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “সভায় শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেল উন্নীত করার বিষয়ে অর্থ সচিব বলেন, ‘বেতন গ্রেড ১১তমতে উন্নীত করার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি অর্থ বিভাগ জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫ এ পাঠিয়েছে, যা জাতীয় বেতন কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে। জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পরে অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে’।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে অর্থ সচিব বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব করলে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে’। শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও শহীদ মিনারে শিক্ষকদের একাংশ বেতন বৃদ্ধির ‘প্রজ্ঞাপনের দাবিতে’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলেন।
পরবর্তীতে রাত সোয়া ৯টায় শহীদ মিনার থেকে সেই শিক্ষকদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। তখন কয়েকজন শিক্ষক বলছিলেন, প্রজ্ঞাপন ছাড়া তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করব না।
শহীদ মিনারে অবস্থান করা লক্ষ্মীপুরের সহকারী শিক্ষক রাশেদ শাহরিয়ার আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন। শহীদ মিনার থেকে শিক্ষকদের পুলিশ সরিয়ে দিয়েছে। আমরা যতটুকু জানি আন্দোলন প্রত্যাহার হয়েছে।
“অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পে কমিশনে প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পে কমিশন বাস্তবায়ন করার কেউ না, তাই সাধারণ শিক্ষকরা প্রজ্ঞাপন দাবি করেছেন। কারণ প্রজ্ঞাপন স্বীকৃতি, প্রেস রিলিজ নয়।”
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার সকাল থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সেদিন বিকালে তারা 'কলম বিরতি কর্মসূচি' পালনে মিছিল নিয়ে শাহাবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।
এসময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠি চার্জ, কাঁদুনে গ্যাসে শিক্ষকদের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের বাধার মুখে শহীদ মিনারে ফিরে এসে রোববার থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। এদিন রাতে শিক্ষক নেতারা কর্মবিরতি স্থগিত করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। যদিও সেই সিদ্ধান্ত পরে তারা সরে আসেন।
সোমবার তৃতীয় দিনের মত শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। সেইসঙ্গে দ্বিতীয় দিনের মত তাদের কর্মবিরতির কর্মসূচিও চলে।
এদিন সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলের পশ্চিম শ্রীফলকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়ি দাতিনাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বুড়ি গোয়ালিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। সেসব স্কুলে যথারীতি ক্লাস চলেছে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ