Publish: Friday, 20 June, 2025, 3:00 PM

চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমের পাইকারি বাজারে নেমেছে ধ্বস। হিমসাগর কিংবা আম্র পালি দীর্ঘ ঈদের ছুটির পর বাজারে কোন জাতের আমেরই ভালো দাম মেলেনি। লক্ষণভোগ আম মিলছে পাঁচশ টাকা মণ আর ভালো জাতের আম কোনটিই পেরুচ্ছে না তিন হাজারের কোটা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদের পর একসঙ্গে বাজারে বহু জাতের আম আসা এবং বৈরি আবহাওয়ায় বাজারে আমের দরপতন হয়েছে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। আম সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি এবং আম দিয়ে রুপান্তরিত পণ্য তৈরি করার সুযোগ থাকলে এমন সংকট কাটানো সম্ভব হতো।
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে সারি সারি ভ্যান গাড়িতে ক্যারেটে আম ভর্তি করে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে আছে কৃষক। দাম নিয়ে যেনো হতাশার শেষ নেই তাদের। বলছেন, গত বছরও আমের দাম ভালো ছিলো, চলতি বছর ভালো জাতের আম ৪৮ কেজিতে এক মণ হলেও কোন ভাবেই মিলছে না সঠিক দাম। তার ওপর যোগ হয়েছে বৈরি আবহাওয়া এবং দাগ যুক্ত আম। ফলে আমের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে রাজশাহী অঞ্চলে।
সবচেয়ে বড় এই বাজারে আম কেনাবেচা হয় অনুমান নির্ভর। এক ক্যারেটে যতো আম ধরে তা আধামণ হিসেবে বিবেচিত হয়। যার ফলে কম দামে ক্রেতারা বেশি আম কিনতে পারছেন।
বানেশ্বর বাজারের বড় বড় আমের মোকামে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম এলাকায় প্রতিদিন শতশত টন আম পাঠাচ্ছেন তারা। ব্যাপারীরাও বলছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর আমের দাম কম। যদিও ঈদের আগে ও পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারগুলোতে এক মণে চল্লিশ কেজির বেশি আম 'ঢলন পদ্ধতি' বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি কেউই। ঢলন পদ্ধতিতে ৪৮ থেকে ৫২ কেজিতে ১ মণ ধরা হয়।
আমের বাজার দর:
লক্ষণ ভোগ ৫০০ টাকা মণ
খিরশাপাত/হিমসাগর ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা মণ
ল্যাংড়া ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ
মল্লিকা ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ
আম্রপালি ২০০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণ
ফজলি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ
আঁঠি আম ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগ অধ্যাপক গিয়াস উদ্দীন আহমেদ জানান, পিক সিজিনে একসঙ্গে অনেক জাতের আম বাজার জাত হওয়া, সংগ্রহের সঠিক নিয়ম কানুন না মানা, বৈরি আবহাওয়া এবং ঈদের ছুটিতে চাহিদা কমে যাওয়া চলতি বছরে আমের দাম কমার মূল কারণ। এ সংকট কাটাতে কৃষক পর্যায় পর্যন্ত ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট তৈরির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বর্তমানে বাজারে লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি, ফজলি আম রয়েছে। জুলাই মাসের শুরুতে বাজারে আসবে আশ্বিনা, গৌড়মতি ও ইলামতি আম।
এ বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমের বাগানে সম্ভাব্য ফলনের গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৬ (টন)। সম্ভাব্য মোট উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। এছাড়া সম্ভাব্য মোট বিক্রির পরিমান ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬শ' ৯৫ কোটি টাকা।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ