শনিবার, ১০ মে ২০২৫,
২৭ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English हिन्दी

শনিবার, ১০ মে ২০২৫
অর্থনীতি
দেশে ঋণপ্রবাহে স্থবিরতা, ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
অনলাইন ডেস্ক
Publish: Tuesday, 6 May, 2025, 12:34 AM

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহে দেখা দিয়েছে মারাত্মক স্থবিরতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, এ সময়ে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ বেড়েছে মাত্র ২.৬৩ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের (৫.৫৩ শতাংশ) তুলনায় প্রায় অর্ধেক এবং গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

২০২৪ সালের জুন মাসের শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণ ছিল ১৬.৪১ লাখ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ১৬.৮৪ লাখ কোটি টাকা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগ পরিবেশের দুর্বলতা ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্থিতিশীলতা না থাকলে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারান। 

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই বৃদ্ধি প্রকৃত ঋণ নয়, বরং সুদহার বৃদ্ধি এবং স্থগিত সুদের সংযোজনের ফলে মোট ঋণস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসার খরচ বেড়েছে, যার চাপ সবচেয়ে বেশি পড়ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উচ্চ সুদ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে, খেলাপি ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে এবং প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হচ্ছে।’ তার মতে, কঠোর মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও বেসরকারি খাতে সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো ঝুঁকছে নিরাপদ মুনাফার পথে—সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে, যেখানে সুদের হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার আগ্রহ কমেছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগ পরিবেশের দুর্বলতাও ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘স্থিতিশীলতা না থাকলে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারান। বরং বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট আমদানি ৫.৩৩ শতাংশ বেড়েছে, তবে একই সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৬.০২ শতাংশ। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতেও একই চিত্র। মার্চ পর্যন্ত এলসি খোলার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পেট্রোলিয়াম, ইন্টারমিডিয়েট গুডস ও মেশিনারিজ আমদানিতে এলসি কমেছে যথাক্রমে ৩.৮৩, ১.৬১ ও ২৬ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকোচন শিল্প উৎপাদনের জন্য ভয়াবহ সংকেত। যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের ঘাটতির ফলে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে, সক্ষমতার নিচে চলছে বহু কারখানা, এমনকি কিছু কারখানা বন্ধও হয়ে যাচ্ছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬.৮২ শতাংশ, যা ২০০৪ সালের পর সর্বনিম্ন। উদ্যোক্তারা ৯ থেকে ১৬ শতাংশ সুদহার এবং বাজারে অনিশ্চয়তার কারণে নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকছেন। ফলে বিদ্যমান ব্যবসাও টিকিয়ে রাখা হয়ে উঠছে চ্যালেঞ্জিং।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, জ্বালানির ঘাটতি না কাটলে ও সুদের হার সহনীয় না হলে শিল্পায়ন মুখ থুবড়ে পড়বে।’

এদিকে এপ্রিল মাসে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে রপ্তানি আয়ে। এপ্রিলে সামগ্রিক পোশাক রপ্তানিতে ধীরগতির পাশাপাশি ওভেন খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে দেশের পণ্য রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে রপ্তানি কমেছে প্রায় ১ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।

তৈরি পোশাক খাতে ১০ মাসে মোট রপ্তানি আয় ৩২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ। তবে শুধু এপ্রিল মাসে আয় ছিল ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ০ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।

ওভেন পোশাক রপ্তানি এপ্রিলে কমেছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যদিও নিট পোশাক বেড়েছে ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘গোটা অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির গতি ইতিবাচক থাকলেও এপ্রিল মাসের পারফরম্যান্স আমাদের সতর্ক করে দেয়। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা ও উৎপাদন সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।’

ডার্ক টু হোপ/এসএইচ
মতামত লিখুন:
https://www.darktohope.org/ad/1731844310_left-banner.gif

সর্বশেষ সংবাদ

ভারতের ছোড়া ৬ ব্যালিস্টিক মিসাইল পড়েছে নিজেদের রাজ্যেই: পাকিস্তান
বোরোর বাম্পার ফলনে খুশি রাজশাহীর কৃষকরা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরো ২৭
যুদ্ধ মানেই মুনাফার খেলা: নচিকেতা
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত পিএসএল
অর্থনীতি- এর আরো খবর
Email: darktohope@gmail.com
© 2024 Dark to Hope
🔝