Publish: Sunday, 23 November, 2025, 10:28 PM

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ‘যৌক্তিক সময়ের’ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। রোববার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস আটকে বিক্ষোভ করেন তারা। একইসঙ্গে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ-জামালপুর-নেত্রকোনা-জারিয়া ও কিশোরগঞ্জের সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ট্রেন আটকে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
রোববার (২৩ নভেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে বেলা ১১টা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস আটকে রাখেন। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হলে কয়েক ঘণ্টা পর ট্রেনটি ছেড়ে দেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে আবদুল জব্বার মোড়ে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। এরপর আবদুল জব্বার মোড়সংলগ্ন রেললাইনে অবস্থান নেন। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস আটকে দেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহগামী রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ফাতেমানগরে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার, আউলিয়ানগরে তারাকান্দিগামী অগ্নিবিনা এক্সপ্রেস, গফরগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ জংশনে ঢাকাগামী বলাকা কমিউটার এবং দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার আটকে আছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাত ৮টা পর্যন্ত রেললাইনে অবস্থান করছেন তারা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস আটকে দেন। দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখায় ট্রেনের যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে কিছু যাত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। পরে দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বেলা আড়াইটার দিকে শুধুমাত্র তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে দিলে সেটি গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি চলমান রাখেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মেহরাজ হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম প্রস্তুতির সময় দিতে হবে, যাতে তারা ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারেন। আমাদের এই যৌক্তিক দাবি পিএসসিকে মানতেই হবে। যে পর্যন্ত পিএসসি এই সময় পরিবর্তন না করছে, সেই পর্যন্ত অবরোধ চলবে।’
আরেক শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দাবি না মানা পর্যন্ত রেলের চাকা ঘুরবে না। শুধু আমরা নই, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আজকে বৃহৎ আন্দোলন হচ্ছে। আমাদের দাবি রুটিন প্রকাশের অন্তত দুই মাস পর পরীক্ষা নিতে হবে। পিএসসি থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো আমরা।’
ট্রেন আটকে রাখায় ভোগান্তির কথা জানিয়ে তিস্তা এক্সপ্রেসের যাত্রী সোহেল রানা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়ালেখা করে বিসিএস ক্যাডার হতে পরীক্ষার সময় পেছানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন, ভালো কথা। তবে ট্রেন আটকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এভাবে আন্দোলন করতে পারেন না তারা। ট্রেনে অনেকে জরুরি প্রয়োজনে নির্দিষ্ট স্থানে যাচ্ছেন। রোগী, নারী-শিশুসহ বয়স্ক মানুষও রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় চিন্তা করেননি। শুধু নিজেদের কথা না ভেবে এগুলো বিবেচনা করতে হবে তাদের।’
একই ট্রেনের আরেক যাত্রী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি কতটুকু যৌক্তিক, সে বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। তবে কিছু হলেই ট্রেন অবরোধ, মহাসড়ক অবরোধ; একেবারেই অযৌক্তিক। এভাবে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে দাবি আদায় অন্যায়। সরকারের অবশ্যই এদিকে নজর দেওয়া উচিত।’
অবরোধের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম ও সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জনদুর্ভোগের বিষয়টি উল্লেখ করে অবরোধ তুলে নিতে বলেন। তাদের কথা শোনেননি আন্দোলনকারীরা।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রেললাইন অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। এখনও তাদের অবস্থান রয়েছে। এতে ফাতেমানগরে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার, আউলিয়ানগরে তারাকান্দিগামী অগ্নিবিনা এক্সপ্রেস, গফরগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ জংশনে ঢাকাগামী বলাকা কমিউটার এবং দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার আটকে আছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।’
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপার আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমরা অনেকবার বুঝিয়েছি। কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা। ট্রেন চালালে তারা লাইনে শুয়ে পড়বে বলে হুমকি দিয়েছে আমাদের। যে পর্যন্ত পরীক্ষা পেছানোর প্রজ্ঞাপন না হবে সে পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘শুনেছি পিএসসিতে একটি সভা হয়েছে। তবে সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই। পরীক্ষা পিছিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে শিক্ষার্থীরা রেল অবরোধ ছাড়বে বলে না জানিয়েছে আমাদের। কোনোভাবেই তাদের বুঝিয়ে সরানো যাচ্ছে না।’
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রেললাইনে অবস্থান করছেন। বারবার বুঝিয়েও তাদের সরানো যাচ্ছে না। বলপ্রয়োগও করা যাচ্ছে না। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘৪৭তম বিসিএসের সময়সূচি নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ময়মনসিংহের স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ ধৈর্যসহকারে ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহের স্থানীয় প্রশাসন বিসিএস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করবে। আমি ছাত্রদের জনভোগান্তি বাড়ানোর পথ থেকে সরে আসতে বলেছি।’
এর আগে শনিবার বিকাল ৫টায় একই দাবিতে একই এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেসময়েও ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে ঢাকাগামী তিস্তা, মহুয়া এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আটকা পড়ে যায়। ওই দিন রাত ৮টার দিকে বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এরপর রাত ১১টার দিকে আবার জব্বারের মোড়ে রেললাইনে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ঢাকা থেকে আসা জামালপুরের তারাকান্দিগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেওয়া হয়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বোঝানোর একপর্যায়ে এক ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে বাকৃবির জব্বার মোড়ে অবস্থিত রেললাইন থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরে যান। পরে এই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু আজ কোনোভাবেই তাদের সরানো যাচ্ছে না। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ