মাছ ধরে বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরার পথে টেকনাফের নাফনদীর নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে দুটি ট্রলার সহ আরো ১৪ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি।
আজ রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন টেকনাফ কায়ুকখালী বোট মালিক সমিতির পরিচালক সাজেদ আহমেদ।
তিনি বলেন, "বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া কিছু ট্রলার ঘাটে ফিরছিল। এ সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা আমাদের ঘাটের দুটি ট্রলারসহ ১৪ মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ট্রলারের মালিক টেকনাফের ডেইল পাড়ার ফরিদ আলম, অপরটির নাইট্যংপাড়ার ছৈয়দ আলম।"
এর আগে শনিবার দুপুরে টেকনাফ ফেরার পথে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে ১২ জেলেসহ আরও একটি নৌকা ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তারও আগে ১২ আগস্ট ট্রলারসহ ৫ জেলে এবং ৫ আগস্ট জাল ও নৌকাসহ ২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২৩৭ জন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার-নৌকা ফেরত আনা হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চত করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘জেলেদের অপহরণের খবর পেয়েছি। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করছে।’
অপহৃত জেলেদের পরিবার জানায়, আরাকান আর্মি মুক্তিপণ দাবি করে। সীমান্তবর্তী দালালচক্রের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়। টাকা দিতে দেরি করলে জিম্মিদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এক জেলের স্ত্রী আমেনা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। ছোট বাচ্চারা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। জানি না আর কখনো তাকে জীবিত দেখতে পাব কি না।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলে সংগঠনগুলোর দাবি, নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরে কোস্টগার্ড ও বিজিবির টহল জোরদার করা এবং মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে জরুরি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
এমন অনিশ্চয়তার মধ্যেই উখিয়ার ইনানীতে রোববার বিকেলে শুরু হয়েছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ‘টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শিরোনামের এ আয়োজনকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দফতরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন ৪০টি দেশের প্রতিনিধি, বিদেশি কূটনীতিক, বিশেষজ্ঞ ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা।
প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত আছেন। সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে মূল অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা জরুরি। এই সম্মেলনে রোহিঙ্গারা সরাসরি তাদের বক্তব্য জানাতে পারবেন।
সম্মেলন ও প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। একদিকে সীমান্তে জেলে অপহরণ, অন্যদিকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক আলোচনা- এই দুই বাস্তবতায় কক্সবাজার এখন দ্বিমুখী সংকটের মুখে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ