পবিত্র আশুরা মুসলিম বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। প্রতি বছর হিজরি সনের মহরম মাসের ১০ তারিখ এই দিনটি পালিত হয়। আশুরা শুধু একটি শোকের দিন নয়, এটি ত্যাগের মহিমা, সত্যের জয় এবং ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার স্মারকও বটে।
আশুরার ইতিহাস:
আশুরার দিনটি বিভিন্ন কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো:
কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা: ৬১ হিজরির এই দিনে (১০ মহরম) ইরাকের কারবালা প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শাহাদত বরণ করেন। ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে তার পরিবার ও অনুসারীদের নির্মম শাহাদত বরণের এই ঘটনা মুসলিম উম্মাহকে গভীরভাবে ব্যথিত করে এবং এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
নবী মুসা (আ.) ও ফেরাউনের ঘটনা: আশুরার দিনেই আল্লাহ তায়ালা নবী মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করে নীল নদ পার করে দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এই ঘটনাটি সত্যের জয় এবং জালেমের পতনের প্রতীক।
অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনা: আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আশুরার দিনে ঘটেছিল বলে জানা যায়। যেমন:
আদম (আ.)-এর সৃষ্টি ও জান্নাতে প্রবেশ।
নূহ (আ.)-এর প্লাবন থেকে মুক্তি।
ইউনুস (আ.)-এর মাছের পেট থেকে মুক্তি।
আইয়ুব (আ.)-এর রোগমুক্তি।
পৃথিবীতে প্রথম বৃষ্টিপাত।
আশুরার গুরুত্ব ও মুসলিম সমাজে এর পালন:
আশুলার দিনে মুসলিমরা বিভিন্ন উপায়ে ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন। শিয়া মুসলিমরা মূলত ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদতকে স্মরণ করে শোক পালন করেন, তাযিয়া মিছিল বের করেন এবং মাতম করেন। অন্যদিকে, সুন্নি মুসলিমরা এই দিনে নফল রোজা রাখেন, দোয়া ও জিকির করেন এবং ইবাদতে মশগুল থাকেন। ঐতিহাসিক মুসা (আ.)-এর বিজয়ের স্মরণে নবী করিম (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং মুসলিমদের মহরম মাসের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
শিক্ষণীয় বিষয়:
আশুরা আমাদের ত্যাগ, ধৈর্য, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে গিয়ে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এটি আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসের গুরুত্বও তুলে ধরে। এই দিনটি মুসলিম উম্মাহকে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং মানব কল্যাণে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগায়।
পবিত্র আশুরা শুধু একটি ঐতিহাসিক দিন নয়, এটি প্রতিটি মুসলিমের জন্য আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক দিক থেকে গভীর তাৎপর্য বহন করে।
ডার্ক টু হোপ/এসএইচ